জেনে নিন,মহিলাদের যৌনইচ্ছা কমে যায় কেন? সমাধান কি

প্রশ্ন ১ঃ আমার বয়স ৩৮+ (স্ত্রীর বয়স ৩০+), আমাদের একটি ৪ বছরের সন্তান রয়েছে। সমস্যা হল যে আমার স্ত্রীর আর আগের মত সেক্সের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই, কিন্তু আমার প্রতিদিনই তার সাথে সেক্স করতে ইচ্ছে হয়। কিভাবে স্ত্রীকে সেক্সে রাজী করাবো? দয়া করে রাস্তা দেখান। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন ২ঃ আমার স্ত্রীর যৌন চাহিদা খুব কম, কি করব? প্রতিদিন সেক্স করা কি ক্ষতিকারক?

উঃ প্রতিদিন সেক্স করা মোটেই ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু স্ত্রীকে সেক্সের জন্য জোর করবেন না। উপরের দুটি সমস্যার সমাধানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা আলোচনা একান্ত প্রয়োজন। স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করুন তার কোথায় সমস্যা হচ্ছে। আলোচনার সময় রাগারাগি করবেন না, স্ত্রীকে ভালবেসে ধীরে সুস্থে কথা বলুন। মহিলাদের যৌনইচ্ছা কমে যাওয়ার কারণ শারীরিক বা মানসিক দু-ধরনের হতে পারে। একটা খুব সাধারণ কারণ হল যৌনজীবনে বৈচিত্রের অভাব! বৈচিত্রের অর্থ সঙ্গী বা সঙ্গিনী বদল করা নয়। এখানে বৈচিত্র মানে যৌন মিলনের পদ্ধতিতে বৈচিত্র। সাধারণত আপনি যেভাবে, যে পরিবেশে, যে আবহে, যে পোজে স্ত্রীর সাথে মিলিত হোন তার থেকে একটু আলাদাভাবে মাঝে মাঝে করার চেষ্টা করুন। শুধু তাই নয় আপনি যে স্ত্রীকে ভালবাসেন সেটাও বিভিন্ন প্রকারে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনার স্ত্রীর যেন মনে হয় যে উনি সত্যিই আপনার জীবনে একজন বিশেষ মানুষ। স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে কোন তিক্ততা থাকলে সেটা অতিশীঘ্র দূর করার চেষ্টা করুন। এসবেই মন খুলে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এমনও হতে পারে যে আপনার রোজ সেক্স করতে ইচ্ছে হলেও আপনার স্ত্রীর একদিন বা দুদিন বাদে বাদে যৌনচাহিদা জাগে, সেক্ষেত্রে স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে পারেন!
মহিলাদের যৌনইচ্ছা কমে যাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ও তাদের প্রতিকার সম্মন্ধে আমরা এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি।

১. আপনার স্ত্রী কি গর্ভনিরোধের জন্য পিল (oral contraceptives) ব্যবহার করেন? গর্ভনিরোধোক বড়ির প্রভাবে শরীরে অনেক সময় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গিয়ে যৌনইচ্ছা কমে যেতে পারে। আপনারা পিল ছেড়ে অপর কোন গর্ভনিরোধ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। মনে রাখবেন পিল খাওয়া ছেড়ে দিলেও শরীরে তার প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
২. সঙ্গমের সময় কি আপনার স্ত্রীর ব্যাথা লাগছে, বা শারীরিক কোন কষ্ট হচ্ছে? অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মহিলাদের যোনিপথ ঠিকমত লুব্রিকেটেড হয়না। এমতাবস্থায় সেক্স কষ্টদায়ক হতে পারে ও তার ফলস্বরূপ মনে সেক্সের ইচ্ছা জাগেনা। নিশ্চিন্ত হোন যে আপনার স্ত্রীর এমন কোন সমস্যা নেই। সমস্যা থাকলে স্ত্রী-রোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৩. প্রেগন্যান্সি, সন্তানের জন্ম, সন্তান পালন, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো ইত্যাদির সময়ও শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্যের ফলে যৌনইচ্ছা কমে যেতে পারে। এছাড়া ওই সময় বাচ্চার দেখভাল করতে করতে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিও যৌনজীবনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থা ও সন্তানের জন্মের পর অনেকের শরীরেই বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তন হয় (যেমন মোটা বা রোগা হয়ে যাওয়া, যৌনাঙ্গের পরিবর্তন ইত্যাদি)। এর ফলে নিজের শরীর সম্মন্ধে আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তার থেকেও যৌনইচ্ছা কমতে পারে।
৪. মেনোপজের কিছু আগে থেকেই মহিলাদের শরীরে যৌন হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে। এর ফলে যৌন চাহিদা কমে যেতে পারে, যোনিতে লুব্রিকেশন ঠিক না হবার দরুন সঙ্গমকালে ব্যাথা লাগতে পারে। দুটোই সুস্থ যৌনজীবন ব্যহত হবার কারণ।


৫. বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, পূর্বের খারাপ যৌন অভিজ্ঞতা ইত্যাদির ফলেও মহিলাদের মন সেক্সের প্রতি বিরূপ হতে পারে।
৬. আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্কে সমস্যা থাকলেও যৌন জীবনে সমস্যা হওয়া খুবই সম্ভব। নিজেদের মধ্যে ঠিকমত কথাবার্তা না বলতে পারলে বা একের চাহিদা, সমস্যা অপরে বুঝতে না পারলে, কোন অমীমাংসিত ঝগড়া-ঝাটি থাকলে তার প্রভাব যৌন জীবনে পড়তে বাধ্য। আপনি যেভাবে সেক্স করতে চান হয়তো সেটা আপনার স্ত্রীর পছন্দ নয়। এমতাবস্থায় নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে কোন সেক্স থেরাপিস্ট বা মানসিক রোগ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন। (মনে রাখবেন মানসিক রোগ মানে কিন্তু কেবল পাগল হয়ে যাওয়া নয়!)
৭. উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ (diabetes), ক্যান্সার, আর্থারাইটিস, হার্টের সমস্যা, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি রোগের ফলেও যৌন চাহিদা কমে যেতে পারে। আপনার স্ত্রী কি কোন ঔষধ খাচ্ছেন? কিছু কিছু ঔষধের প্রভাবেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিন্ত হোন। আপনার স্ত্রীর স্তন, যৌনাঙ্গ বা শরীরের অন্য কোথাও কি কোন অপারেশন হয়েছিল? তার ফলেও যৌনইচ্ছা কমতে পারে।
৮. অতিরিক্ত মদ্যপান যৌনইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে।
৯. মহিলাদের শরীরেও কিছুমাত্রায় টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয় যা যৌন চাহিদা বজায় রাখতে অত্যন্ত জরুরী। কোন কারণে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই যৌনইচ্ছা কমে যাবে। ডাক্তার দেখিয়ে উপযুক্ত পরীক্ষা করে দেখুন আপনার স্ত্রীর শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ঠিক রয়েছে কিনা।
মহিলাদের যৌনইচ্ছা কমে গেলে তার চিকিৎসা
ঠিক কি কারণে যৌনইচ্ছা কমে গেছে সেটার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করতে হবে। যেমন সম্পর্কের সমস্যা বা অপর কোন মানসিক কারণে যদি যৌন জীবন ব্যহত হয় তবে সেক্ষেত্রে সেক্স থেরাপিস্ট, রিলেশনশিপ কাউন্সেলর বা কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে বসে কাউন্সেলিং করলে উপকার হবে। আপনাদের বাচ্চা কি রাতে আপনাদের সাথে ঘুমায়? হয়তো তার উপস্থিতিতে আপনার স্ত্রী সঙ্গম উপভোগ করতে পারেনা। বাচ্চাকে আলাদা ঘরে শোওয়ানোর ব্যবস্থা করুন। কোন ওষুধের প্রভাবে বা গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার ফলে যদি যৌন চাহিদা কমে যায় তবে ওষুধের মাত্রা, বা ওই ওষুধ পরিবর্তন করলে উপকার হতে পারে। গর্ভনিরোধোক বড়ির পরিবর্তে কনডম ব্যবহার করেত পারেন। আপনার স্ত্রীর কোন রোগ হয়ে থাকলে সেই রোগের চিকিৎসা করান। চিকিৎসার সময় ডাক্তারকে আপনাদের যৌন জীবনের সমস্যার কথাও খুলে বলুন। টেস্টোস্টেরোনের অভাবে সমস্যা হয়ে থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে শরীরে টেস্টোস্টেরন বাড়াবার ব্যবস্থা করুন। এছাড়াও নিয়মিত শারীরিক এক্সারসাইজ যৌনইচ্ছা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
মানুষের যৌনইচ্ছা বা যৌন চাহিদা একটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। শরীরের বা মনের বিভিন্ন ছোট-বড় সমস্যার ফলে যৌনইচ্ছা কমে যায়, এমনকি একদম ফুরিয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের সব থেকে ভাল উপায় প্রথমে একজন ভাল স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা। উনি আপনাদের সমস্যার লক্ষ্যণ, ইতিহাস ইত্যাদি শুনে কিছু শারীরিক পরীক্ষা যেমন, রক্ত পরীক্ষা, হরমোন পরীক্ষা, যৌনাঙ্গের পরীক্ষা ইত্যাদি করে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার সঠিক কারণ বুঝতে পারবেন। যদি শারীরিক কোন অসুখের কারণে এই সমস্যা হয় তবে সেইমত ঔষধ দেবেন। আর যদি মানসিক কারণে সমস্যা হয় তবে ভাল মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা সেক্স থেরাপিস্টের কাছে পাঠাতে পারেন। যৌনইচ্ছা কমে যাওয়া একটি অসুখ, তাই জোর করে স্ত্রীকে সঙ্গমে রাজী করাতে যাবেন না বা এই অসুখকে উপেক্ষা করবেন না। ডাক্তার দেখান, স্ত্রীকে ভালবাসুন ও সুস্থ থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন